ফাহাদুর রহমান শামা
গ্রীষ্মের প্রথম রাতে আমি ট্রেনে চড়ে গিয়েছিলাম দূরের কোনো ইস্টিশনে। সেবার গরমে গলে গিয়েছিল শহরের যত বড় বড় মোড় বুদ্ধিজীবি ভাস্কর লাশের গন্ধ আমার সহ্য হয় না বলে একটা মাছি বুক পকেটে নিয়ে আমি চলে গিয়েছিলাম। ট্রেনটা কোন শব্দ ছাড়া চলতে থাকে গ্রীষ্মের প্রথম রাতের প্রথম প্রহরে। চাঁদ-হারা একটা শহরকে ঘিরে গড়ে ওঠা অদ্ভূত কষ্টের পর আমি আর কিচ্ছু শুনিনি। দেখিনি কিছু কোন জানলা ছিল না বলে। সিগরেট হাতে বার বার উঠে গিয়ে একটি রমণীর কাছে শুধু আগুন চেয়েছি.. তার মুখ বরাবর চেয়ে থেকেছি অনেকক্ষণ, আমাকে সে একটি আহত কুকুর ভেবে হাত বুলিয়ে দিলে আমি জীবনের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে ঘুরতে থাকি পুরোটা ট্রেন জুড়ে। এখানে অনেক মানুষ, এখানে হাঁটতে গেলে হাঁটতে হয় মাথা নিচু করে অনেকগুলি খালি পা তার ভেতরে একটি সোনালি জুতোয় সাদা ধুলো লেগে থাকে। সেটা ছিল গ্রীষ্মের রাত হাওয়া হীন একটি বদ্ধ ট্রেনে জীবন উগড়ে পড়ছে, সাধারন মানুষ মেলে ধরেছে প্রত্যেকে প্রত্যেকের শরীর ত্রুটি পূর্ণ একেকটি দেহ কোমল ভাবে মিশে আছে অন্ধকারে অবরুদ্ধ সময়ের ভেতরে। আর তাদের দুঃখ ভরা ব্যাগের না লাগানো তালা খুলে বেরিয়ে পড়ছে চুলের মুঠি, বিষন্নতা, নতুন পুরুষের ভূল ঠিকানা… এর ভেতরেই কোন বুদ্ধিজীবি হয়ত আর্টিস্ট হয়ে জন্ম নেবে, মানবীর নিরুত্তর মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ভূলে যাবে রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র, ইউটোপীয় উদারতা আর জিজ্ঞাসা; একে ফেলবে ইতিহাসের তালগোল পাকানো অসংখ্য ‘ বর্ডার’ লাইনের জীবন্ত ন্যুড ছবি। আমি তারই অপেক্ষায়… একটা মাছির আয়ু নিয়ে কোথাও যাচ্ছি…